সদস্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ফেনী জেলায় দাঙ্গা হাঙ্গামা রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি চুরি ডাকাতিসহ অসামাজিক কার্যকলাপ অব ̈াহত রয়েছে। জেলার রাজনৈতিক সহিংস ঘটনায় গত চার মাসে প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।জাতীয় সংসদের তিনটি আসন নিয়ে গঠিত ফেনী জেলায় প্রায় ১২ লাখ আদিবাসী বসবাস করেন। তাদের সবারই এখন এক প্রশ্ন, এভাবে কি রাজনৈতিক সহিংসতা চলতে থাকবে? খুন, চাঁদবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, হাইজ্যাক, চুরি, ডাকাতি কখনো কি বন্ধ হবে না? এই জেলার মানুষ কি কখনো শান্তিতে বসবাস করতে পারবেনা? মায়ের বুক থেকে সন্তানকে নিয়ে এভাবে হত্যা করবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা? এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা বৃহস্পতিবারে হত্যা করেছে সংখ্যালঘু ভূবন চন্দ্র দাস ও অর্জুন দত্ত বৈষ্ণবকে। এদিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ পাশবিকতায় মেতে উঠেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর। জেলায় দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজী থানার সংখ্যালঘুরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। এছাড়া জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজীর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলছে নারকীয় তাণ্ডব। সোনাগাজীর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আসন্ন দুর্গাপূজা বাদ দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঘরছেড়ে চলে যাচ্ছে দূরদূরান্তে। সোনাগাজীর সংখ্যালঘুরা অভিযোগ করেছে যে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হবে মোটা অংকে, না হলে দুর্গাপূজা করতে পারবে না। জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার জগতপুর, সিন্দুরপুর, নেমন্তরপুর, সেকান্দরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায়, হুমকিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তারা ভিটে মাটি ছেড়ে দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু কিছু লোকজন সদর থানার তুলাবাড়ি সহ ফেনী শহরে অবস্থান করছে। এদিকে তুলাবাড়ি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা স্বপন চন্দ্র দাস ও মাখন চন্দ্র দাসকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটানোর পর বর্তমানে তারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নৌকায় ভোট দেয়া এবং সোনাগাজী ও দাঁগনভূঁইয়ার হিন্দুদেরকে আশ্রয় দেয়াই তাদের প্রধান অপরাধ। এদিকে ফেনী-১ আসনে হিন্দুদের ওপর সন্ত্রাসীদের অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পরশুরামের হিন্দু গ্রাম গুলোতে বিশেষ করে মির্জানগর , বিলোনিয়া, চিথালিয়া, শুয়ারবাজার, কোলপাড়া গ্রামের হিন্দুদের কাছে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করছে। হুমকি দিয়ে বলছে চাঁদা না দিলে দুর্গপূজা পালন করতে দেবে না। ব্যবসা করতে হলে প্রতিমাসে চাঁদা দিতে হবে, না হলে ভারতে চলে যেতে বলেছে। ফুলগাজী থানার দুর্গাপুর, বৈরাগপুর, বসন্তপুর, মনিপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের হিন্দুদের ওপর চলছে নারকীয় অত্যাচার। বসন্তপুরের হিন্দু নেতা ডা. সুকুমারের শ্যালককে আমজাদহাট ওষুধের ফার্মেসী থেকে নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা । পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। সন্ত্রাসীরা তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে । চাঁদা না দেয়া তার অপরাধ। একই বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী শংকরকেও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে চাঁদা দেয়ার জন্য। এদিকে ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর, ঘোপাল, মন্দিয়া, জঙ্গলমিয়া, দারোগাহাটসহ অধিকাংশ গ্রামের হিন্দুদের সন্ত্রাসীরা বলছে চাঁদা দাও তাহলে দুর্গাপূজা করতে দেয়া হবে। চাঁদা না দিলে ভারতে চলে যাও।

দৈনিক মুক্তকন্ঠ, ১৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন