নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ওপর অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশের কোন রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে না। তাই কারণে-অকারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু করার যে প্রবণতা তা প্রতিরোধের ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। গতকাল প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, মহিলা পরিষদ ও সামাজিক আন্দোলন আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে সুলতানা কামাল, খুশী কবির , মালেকা বানু ও তারেক আলী এই দাবি জানান। সম্মেলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনেরতথ্য উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুসন্ধানকারী অসিত দাস ও নাসির আহমেদ। এ সময় সুলতানা কামাল বলেন, অতিরঞ্জিত বা রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে নয়, মানুষের সমস্যা বিচার করতে হবে মানবিকতা দিয়ে। তবে যে দল বা পক্ষ সন্ত্রাস করুক না কেন, পত্রপত্রিকার রিপোর্টে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে মাত্রায় হোক না কেন, হামলা নির্যাতন হচ্ছে। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যানুসন্ধানের রিপোর্টে বলা হয়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সত্যেন্দ্র নাথ, রামশীল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ একই স্কুলের শিক্ষক লক্ষীকান্তের উপস্থিতিতে নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে আসা তিন শতাধিক সংখ্যালঘু নারী, পুরুষ প্রতিবেদকের কাছে তাদের কথা জানাতে ভিড় করে। এদের কয়েকজন জানায়, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার মৈন্তরকান্দি, চাঁদসী, ধানডোবা, ধোনারকান্দি, বাকাই, বাহাদুরপুর, রাজীহর, বাটাজোর, রাংতা, চইয়াং ̧টিয়া, বাটরা, কোদালদহ, ভেন্নাবাড়ি, আমবাড়ি, মোল্লাপাড়া, পয়সারহাট, কোপাইতনগরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের ১০ হাজার নারী-পুরুষ নির্বাচনোত্তর হামলা, বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের হামলায় আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ আতঙ্কিত হয়ে এ গ্রামে (রামশীলে) আশ্রয় নিয়েছে। গৌরনদীর গৌরাঙ্গ বালার ওপর হামলা হয়েছে, তাকে স্টাম্পে সই করতে বলে, না হলে ৪০ হাজার টাকা দিতে বলে। সন্ত্রাসীদের কথা না শোনায় তার হাত ভেঙে দিয়েছে। তাদের বাড়িতেও সন্ত্রাসী হামলা করে এবং গরু ছাগল সব কিছু নিয়ে যায়। বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য এ গ্রামের নিতাই, মনোজ বৈন্যগোবিন্দ দাস ও জগদীশ বাড়ৈয়ের বাড়িঘরে হামলা হয়। আগৈলঝাড়ার আশোক সেন গ্রামের প্রশিকা কর্মী যার একটি পা আগেই পঙ্গু। নির্বাচনের পর সন্ত্রাসীরা তার ভাল পাগুটি চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে বিভক্ত করে দিয়েছে। তাকে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওদিকে বরগুনা জেলার বামপা উপজেলার উত্তর কাকচিড়া গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নরেন্দ্র হালদারকে নির্মমভাবে প্রহার এবং প্রকাশ্যে মানহানি করা হয়, তার ভাইকে জখম করা হয়। তাকে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার চোখ উপড়ে ফেলার প্রস্তুতি নেয়া হলে স্থানীয় মানুষজনের প্রতিরোধে তা শেষ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। কাঁঠালতলী ইউনিয়নের প্রতিমা ভাংচুর, চরলাঠিমারায় সঞ্জয় হালদারের স্ত্রীর শালীনতাহানীর কথা, হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু গরু নিয়ে প্রীতিভোজ করা, দোকান দখল করা এবং হোগলাপাশা গ্রামের মেধাবী ছাত্রীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের কথা জানা যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্যের আত্মীয় মোস্তফা এই মেয়েটির বোনটিকে চাপ দিচ্ছে সে যেন মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।

যুগান্তর, ১৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন