চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃত্ববৃন্দ দেশব্যাপী নির্বাচনোত্তর ও নির্বাচন পরবর্তী অব্যাহত সহিংসতার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারো কাছে রাষ্ট্রীয় আমানত, কারো কাছে ভোটের আমানত, কারো নারকীয় নির্যাতনের লক্ষ্য বস্তু হয়ে সীমাহীন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়ে মানবেতর অবস্থায় এ দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠী দিনযাপন করছে বিগত ২৯ বছর যাবৎ। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো মৌলিক বিষয়ে, অস্তিত্ব ও স্বকীয়তার বিষয়ে, ধর্ম-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিষয়ে, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আর মর্যাদার বিষয়ে কারো যেন ভাববার অবকাশ নেই, প্রয়োজনও নেই। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পালিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে একথা বলেন। বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের চলমান নির্যাতনের উল্লেখ করে বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারের ঘৃণিত সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও তার সহযোগী কয়েকজন উপদেষ্টা এসব ঘটনা নিরসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বলেন,‘ঘটনা অতিরঞ্জিত’ এবং‘ঘটনা স্বাভাবিক’। তিনি এ ধরনের জঘন্য সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাদের ধিক্কার জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এরপরও হিন্দু জনগোষ্ঠী প্রতীক্ষায় থাকলো নির্বাচিত নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি শ্বাভাবিক হয়ে আসবে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে, ক্ষত চিহ্নমুছে ফেলা হবে, রচিত হবে সম্প্রীতির নবতর প্রেক্ষাপট। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের ওপর যে অত্যাচার, নির্যাতন, লুন্ঠন, ধর্ষণ শুরু হয়েছে তার অবসান এখনো হয়নি। বরং প্রতিদিন নতুন ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। বক্তব্যে বর্তমান সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়, তারাও সাবেক প্রধান উপদেষ্টার মতো ঘটনা অতিরঞ্জিত বলে এড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছু। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলা হচ্ছে না। সঙ্গত কারণে দেশের আড়াই কোটি সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠী চরম উৎকন্ঠার মধ্যে আছে। ‘সাধারণ জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ইন্ধন জোগায় যে কুচক্রী মহল তাদের চিহ্নিত করতে হবে’ সরকারের এ ধরনের বক্তব্যের প্রসঙ্গে সরকার ও জাতির কাছে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ববৃন্দ প্রশ্ন রাখেন, ‘এই কুচক্রী মহল’ কারা তা কি কেউ জানেন না? এ অবস্থায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সকল আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য বর্তমান সরকার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতেও ব্যর্থ হয়েছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করে প্রতিবাদ স্বরূপ অনাড়ম্বরভাবে পূজা উদযাপনে বেশ কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হয়। এসবের মধ্যে পূজামণ্ডপে আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জন, ঘোষনা ও বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত মাইক ব্যবহৃত হবে না। প্রতিটি পূজামণ্ডপে প্রতিবাদ ও দাবি সংবলিত কালো ব্যানার টাঙানো, স্মারকলিপি পেশ, অষ্টমী পূজার দিন সকাল-সন্ধ্যা অনশন, নবমী পূজার দিন মানববন্ধন অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন এবং ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন পূজার জন্য এরপরও হিন্দুরা কেন পূজা করবেন না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ঐক্য পরিষদ নেতা এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন করবেন আবার ধুমধামের সঙ্গে পূজা করতে বলবেন তা হয় না। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী ৪০ লাখ টাকা দিয়ে নিজে উৎসব করে পূজা করুক। কিন্তু বাংলাদেশের নিগৃহীত হিন্দু সম্প্রদায় সাড়ম্বরে পূজা উদ্যাপন করবে না। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সুভাষ চন্দ্র লালা, উপদেষ্টা অধ্যাপক রনজিত কুমার দে, রনজিত কুমার চৌধুরী, প্রবীণ বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, এডভোকেট পূর্ণেন্দু বিকাশ চৌধুরী, প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরী, প্রফুল− রঞ্জন সিংহ, এডভোকেট অমর প্রসাদ ধরগুডা. অশোক দেব, মৃদুল দে প্রমুখ।

ভোরের কাগজ, ১৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন