ফেনীতে নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। সেখানে ৬০ হাজার হিন্দু ভোটার ভোট দিতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ কর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। এবং পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। জেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল সংগঠনগুলো নতুন প্রশাসনের অধীনে ফেনী-২ এবং ফেনী-৩ আসনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছে । ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগ-৪৯টি কেন্দ্রে ভোট বাতিল করার দাবি জানিয়েছে।

অপরদিকে প্রশাসন ফেনী-৩ আসনের ৩টি এবং ফেনী-২ আসনের ১টি বাতিলের কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রে পৃথক পৃথক ঘটনায় ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ৪ থেকে ৫টি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই-এর ঘটনা ঘটে। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ফেনী-৩ চরগনেশ, চরচান্দিয়া, দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া, ছাড়িৎকান্দি, চরশাহভিখারী, দাসেরহাটসহ হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামের মানুষকে সন্ত্রাসীরা ভোটের আগের রাতে হুমকি দিয়ে আসে। হুমকির মুখে তারা গতকাল ভোররাতে থানার সামনে অবস্থান নেন। দুপুরের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তারা এলাকায় ফিরে যান। কিন্তু তারা ভোট দিতে পারেনি। একই এলাকার চরশাহভিখারী গ্রামের হিন্দু পরিবারের একজন কিশোরী মেয়েকে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যায়। রাতভর নির্যাতনের পর তাকে তারা মুক্তি দেয়।

নির্বাচনের আগে হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে এনএসআই-এর এক কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে। ফেনী জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজ আহমেদ চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দত্ত, ৬০ হাজার হিন্দু ভোট দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করে নতুন প্রশাসনের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ
থেকে ৪৯টি কেন্দ্র বাতিলের দাবি জানানো হয়। ফেনী ৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুল আলম তারা গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অরাজকতাপূর্ণ নির্বাচন তিনি দেখেননি বলে নতুন প্রশাসনের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন।

গতকাল ৮টা থেকেই সব ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সোনাগাজী ছাড়া আর সব জায়গায় ভোটাররা ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে সকাল ৭টা থেকে ভোট দিতে আসে। ফেনী সদর পিটিআই স্কুলসহ অন্যান্য জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোকজন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত ছিল। সকলের মধ্যে উৎসব আমেজও লক্ষ্য করা গেছে। ফেনীতে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপি পোলিং এজেন্টরা এবং বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগ পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত থাকতে পারেনি। সেনা বাহিনী বিডিআর, পুলিশ, মূলত শহর এলাকার রাস্তায় টহল দিয়েছে। গ্রাম এলাকায় তাদের উপস্থিতি কম থাকায় নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে।

এদিকে ফেনী নির্বাচন কন্ট্রোলরুমে সোনাগাজী সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা যায়, ফেনী-৩ আসনের ভূঞারহাট,বটতলী, চরলালা কেন্দ্রগুলোর ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এ সময় ফেনী-২ আসনের বিরিঞ্চি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মারুয়ার চরে ভোট স্থগিত করা হয়। এ আসনগুলোতে ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার। ফেনী-৩ আসনের ভূঞারহাট কেন্দ্রে ৬ জন সন্ত্রাসী এসে ২০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে প্রিসাইডিং অফিসার মোস্তফা কামাল এবং পুলিশ কনস্টেবল সিরাজকে মারধর করে ৩টি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়। এ সময় পুলিশ ২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের ৮ রাউন্ড গুলি সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নিয়েছে।

এদিকে গত শনিবার রাত ৩টায় সন্ত্রাসীরা সদর থানার বেতাগা ইউনিয়নে আবুল কাশেম নামে এক সন্ত্রসীকে গুলি করে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে।
ফেনী-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) ফাঁকা মাঠে নির্বাচন করেছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ফাঁকা মাঠে নয়। প্রতিদ্বন্দ্বি স্বশরীরে নেই তবে তার কর্মী রয়েছে।

ফেনী-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল জাফর ইমাম প্রশাসন খালেদা জিয়ার পক্ষ অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ করেন। অপরদিকে ফেনী জেলার প্রশাসক ভোরের কাগজসহ অন্যান্য কয়েকটি দৈনিকের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়েছে। যেখানেই গণ্ডগোল প্রশাসন সেখানে শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

ভোরের কাগজ, ২ অক্টোবর ২০০১
কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন