সিরাজদিখানে গাঙ্গুলী বাড়ী দখল নেয়ার অপচেষ্টা ও দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ সিরাজদিখান উপজেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা কমিটিসহ মানবাধিকার, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

 

একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এই নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশের সব মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

৯ আগস্ট রোববার সংবাদ সম্মেলনে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করে বলা হয়, গাঙ্গুলী বাড়ী দখল নেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ না হলে তা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এসব ঘটনা মানবাধিকারের জন্য এক অশনিসংকেত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে কোলা ইউনিয়ন গৌরীপুর গ্রামে সুদর্শন গাঙ্গুলীর বাড়ি এ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন করেছেন কোলা ইউনিয়ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি সুদর্শন গাঙ্গুলী।

সংবাদ সম্মেলনে সুদর্শ গাঙ্গুলী বলেন, আমাদের পৈত্রিক সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত ৮১ শতাংশ জমি এলাকার সোবহান মাঝি, সহিদুল, সিদ্দিক মোল্লা, ইউপি সদস্য রওশন আরা, সাদিয়া পারভীন লাবনীসহ একটি চক্র। জালজারিয়াতি ও প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্ঠা করছে। এই সম্পত্তির বর্তমান ব্জাার মুল্য কোটি টাকা।

বিষয়টি আমি জানতে পেরে সোবহান মাঝির সাথে দেখা করতে গেলে সোবহান মাঝি ও সিদ্দিক মোল্লা আমাকে বলেন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাকে হত্যা করে আমার পরিবারসহ প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়কে পিটিয়ে উলঙ্গ করে দেশ ছাড়া করা হবে। সিদ্দিক মোল্লার নামে বিভিন্ন সময় নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ অপরাধী কর্মকান্ডের অভিযোগের কারনে গ্রামের সকলেই তাকে ভয় পায়। ফলে উপজেলার চেয়ারম্যানকে বিষটি লিখিত ভাবে জানিয়ে আমরা সিদ্দিক মোল্লা বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে আছি। লোকমুখে জেনেছি আমাদের পুরো পরিবারের জমি সম্পদ দখলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার অপরাধীদের নিয়ে সিদ্দিক মোল্লা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। ফলে আমরা পরিবারসহ আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিক্রম করছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন সিদ্দিক মোল্লা কতোটা ভয়ঙ্গর অপরাধী এছাড়া তার ছেলে বিদ্যুৎ মোল্লাও বাহিনী নিয়ে এলাকায় টহল দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে আমাদের গ্রাম ছাড়া করার কথা। সিদ্দিক মোল্লার বাবা মোনতাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে মন্তা মোল্লা ১৯৭১ সালে স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধী ছিলো। সংখ্যালঘুসহ দুর্বল পরিবার গুলোকে তারা বিভিন্ন সময় টার্গেট করে বিভিন্নভাবে হয়রানীসহ জমি হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ভয়ংকর এই বাহিনীর সদস্যদের কারনে আমরা অনিরাপদ হয়ে পড়েছি।

এ সময় তিনি আরো বলেন, যে বাড়ীতে আপনাদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করছি এখানেই ১৯৭১ সালে ঢাকা থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তৎকালীন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান হিসাব রক্ষক অনিল কুমার সাহাসহ সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এক রাতে স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্থানী সৈন্যদের এনে আমাদের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়া ইত্তেফাকের প্রধান হিসাবরক্ষক অনিল কুমার সাহাকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে। আমার বাবাকে ও আমাকে ধরে নিয়ে যায় মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজের পাকিস্থানী সেনা ক্যাম্পে। বর্বর নির্যাতন চালোনো হয় আমার ও বাবার উপরে। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসলেও এখনো ভুলতে পারিনা সেই বিভিষিকাময় দিনের কথা।

এরপর দেশ স্বাধীনের পরে আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দলের কঠিন সময়ে আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে অনেক ঝুকিতে পড়েছি। অথচ দল ক্ষমতায় আর আমি স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রে আমার জমি হারাতে বসেছি।

এছাড়াও তিনি সংবাদ সম্মেলনে সকল আনিত অভিযোগ প্রশাসনকে তদন্ত করার দাবি জানান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সূত্র

মন্তব্য করুন