নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে যশোরের সংখ্যালঘু ভোটারদের ততই হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। ফলে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দেয়ায় দু’জনকে আটক করেছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বুধবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ এবং জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ যশোর সার্কিট হাউসে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এবং পুলিশের ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের শঙ্কার কথা জানান।

যশোরের ৮টি উপজেলায় লক্ষাধিক সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে। প্রতি বছর সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের হুমকি দেয়া হয় একটি বিশেষ দলের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার মানুষের অভিযোগ, এবার তাদের ওপর হুমকি-ধামকির পরিমাণ বেশি। এবারও তাদের নৌকায় ভোট না দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার সুড়ো বাগডাঙ্গা, বাহাদুরপুরের ঋষিপাড়া, অভয়নগরের সুন্দনী, মনিরামপুরের ৯৬ এলাকা এবং কেশবপুরের একটি অংশে সংখ্যালঘু ভোটারদের বসবাস। নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করার পরই এই এলাকার ভোটারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে শামীম আহমেদ এবং সন্ধ্যায় তৌহিদুর রহমান খোকন নামের দু’ যুবককে আটক করে। পুলিশ বলেছে, এরা বেজপাড়া এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটারদের বাড়ি গিয়ে নৌকায় ভোট না দেয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছিল। এদিকে বুধবার দুপুরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা বিমল রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সেক্রেটারি বাণীব্রত ঘোষ, অনিল চন্দ্র ঘোষ, স্বপন ভট্টাচার্য যশোর সার্কিট হাউসে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দিন আহমেদ, ডিআইজি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক একেএম জাফরউল্লাহ খান ও পুলিশ সুপার চৌধুরী আহসানুল হক। নেতৃবৃন্দ তাঁদের বলেন, যশোরে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাই শুধু ভোট কেন্দ্র নয়, সংখ্যালঘু গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হোক। তারা আরও বলেন ভোটের পর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এই ভয়ে অনেকে ভোট দিতে যায় না। হুমকি দেয়ার পাশাপাশি এবার সংখ্যালঘু এলাকায় চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনার পর বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি বলেন, আপনারা ভীত হবেন না। ভোট কেন্দ্রে যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১

কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন