কেরানীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেলনা গ্রামে সংখ্যালঘু ৪২টি পরিবারের ওপর ৮ই অক্টোবর মধ্যরাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা হয়েছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়ের জনৈক নজুগুর নেত…ত্বে ৩৫/৪০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হিন্দু অধ্যুষিত বেলনা গ্রামের ৫ জন তরুণী-মহিলার সম্ভ্রমহানি, বাড়ীঘর ভাঙচুর, মালামাল লুটপাট এবং পুরুষদের নির্দয়ভাবে প্রহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলনা গ্রামের কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের নির্যাতিত সদস্যদের সাথেও কথা বলেছেন। তবে যেসব পরিবারের সদস্যরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে⎯ তাদের কেউ আর বেলনা গ্রামে নেই। ফের নির্যাতন-হামলার আতংকে তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়- স্বজনের বাড়ীঢ়রে আশ্রয় নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, ১ অক্টোবর নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ার অভিযোগ তুলে ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে বেলনা গ্রামের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিল বিএনপির নজিমুদ্দিন নজু। সে নিজেকে একজন প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয় দেয়। হামলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জামায়াত ও জাপার (একাংশ) সদস্যরাও ছিল। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৫জনের মধ্যে ১৪ বছরের তরুণী থেকে শুরু করে ৪৮বছর বয়স্কা মহিলাও রয়েছে। বেলনা গ্রামের বিশ্বজিৎ-এর পরিবারটি সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ব্যবসায়ী এ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৩ জন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে মূল ̈বান মালামাল লুট করা হয়। ৮ অক্টোবর মধ ̈রাতে এ নির্মম ঘটনার পর বিশ্বজিৎ পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়িঘর ফেলে গ্রাম থেকে চলে গেছে। বেলনা গ্রামের ৪২টি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্যদের অনেকেই স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী, কেউ কৃষক কিছু দিন মজুরও রয়েছে। ৮ অক্টোবর রাত ১টা থেকে ৪ঘন্টা নির্মম নির্যাতন পরিচালিত হয় ৪২টি পরিবারের সদস্যদের ওপর। আশেপাশের গ্রামবাসীরা এ ঘটনা দেখেছে, শুনেছে কিন্তু এখন কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। কারণ সেই প্রভাবশালী নজু ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছে। ৪২টি সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর বর্বর নির্যাতনের পর থানা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কাছে যাতে মুখ না খোলে সেজন্যও হুমকি দিয়ে আসা হয়েছে। একদিকে প্রাণনাশের হুমকি, অন্যদিকে মান-ইজ্জতের ভয়ে বেলনা গ্রামের সংখ্যালঘু নির্যাতিতরা এখন মুখ খুলছে না। কেউ কেউ সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে শুধু কেঁদেছে। অবশ্য কেরানীগঞ্জ থানার নির্বাহী অফিসার ৮ অক্টোবর মধ্যরাতের পুরো ঘটনা সর্ম্পকে অবহিত হয়েছেন। তবে ওইসব ঘটনার ব্যাপারে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে অনেকেই এগিয়ে আসছে না। সন্ত্রাসীদের প্রাণনাশের হুমকি বেলনা গ্রামের সবারই মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খবরের কোম্পানীগঞ্জ সংবাদদাতা শফিক চৌধুরী সহ কয়েকজন সাংবাদিক ইতিমধ্যে বেলনা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। মধ্যযুগীয় বর্বরতার নায়ক একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাই হওয়ায় অনেকে সেই ভয়াল কাহিনী বর্ণনা করেও পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ থানায় কোন মামলা কিংবা অভিযোগ রের্কড হয়নি। তবে মঙ্গলবার থানার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে একটি সাধারণ ডায়রী করেছে। তাতে বেলনা গ্রামে ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের তথ্য স্থান পায়। পাশবিক নির্যাতনের কোন তথ্য কিংবা কাহিনী রের্কডকৃত জিডিতে উল্লেখ করা হয়নি।

দৈনিক খবর, ১৮অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন