টেনে হিঁচড়ে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে পুকুরে নিক্ষেপের ঘটনায় পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ রবিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২ নভেম্বর শনিবার রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ। মামলায় ছাত্রলীগ নেতা সৌরভসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এরপর শনিবার মধ্যরাতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অযোগ্য শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেয়ার আবদার না রাখায় শনিবার দুপুরে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে লাঞ্ছিত করে পলিটেকনিকের ভেতরেই পুকুরে ফেলে দেয় সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় পুকুরের পানিতে ভিজে তার মোবাইল ফোনটি নষ্ট। সাঁতার জানায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্ররা জানান, ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে তারা। নানান অপকর্মে জড়িয়েও পড়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। তবে অভিযোগ ও বহিষ্কারের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা কামাল হোসেন সৌরভের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে নগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশ জানায়, ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। নগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তাফা বলেন, ক্যাম্পাস থেকে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই ফুটেজ দেখেই আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ওসি বলেন, আটকদের সঙ্গে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। বাকিদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। রবিবারেই তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

রাজশাহী নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সৌরভের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে তাকে বহিষ্কারের জন্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার জয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে ছাত্রলীগের আর কারও বিরুদ্ধে ঘটনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় পলিটেকনিকের শিক্ষক এবং কর্মচারীরা বৈঠক করেছেন। তারা দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে ক্লাস বর্জন ও কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, ২ নভেম্বর শনিবার দুপুরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৌরভকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টার দিকে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তর্কবিতর্ক হয়। পরে দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ এবং তার সহযোগীরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ তখন মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিজের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ১০ তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ অধ্যক্ষের হাত ধরে টানছিল আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে টেনে তোলেন।

জনকণ্ঠ

মন্তব্য করুন