বগুড়ার শাজাহানপুর থানার সাবেক এসআই আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ফুঁসে উঠেছেন।

 

প্রতিবাদে শত শত জনগণ মাঝিড়া মাছের আড়ত ও আশপাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক একেএম আবদুল মতিন আকতার ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিকার পেতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করেছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের আবদুল খালেক মঞ্জু মাস্টারের ছেলে ও মাঝিড়া নাসির উদ্দিন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক একেএম আবদুল মতিন আকতার অভিযোগ করেন, তার দাদা নাসির উদ্দিন ৪০ বছর আগে ১৯৮১ সালে সাজাপুর মৌজায় মফিজ উদ্দিনের কাছে চার শতক জায়গা কেনেন। বর্তমানে জায়গাটি তার (আকতার) নামে রেকর্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র হয়েছে।

গত ২০০৩ সালে এসআই আতিকুল ইসলাম শাজাহানপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারা ভঙ্গ করে তিনি ওই বছরের ৬ জুলাই তার স্ত্রী লায়লা আতিকের নামে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কমমূল্য দেখিয়ে ওই চার শতক জমি কেনেন (দলিল নং-১২৫৬৭)। বিক্রেতা দেখান ওই জায়গার বিক্রেতার ভাতিজা জামাত আলীকে। ২০১৩ সালে অন্য থানায় থাকাকালে এসআই আতিকুল ইসলাম অবৈধভাবে জমির দখল নিতে চেষ্টা করেন।

তার ভাই শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। মামলায় শিক্ষক আতিক, তার বৃদ্ধ বাবা আবদুল খালেক মঞ্জু মাস্টার ও পরিবারের সদস্যদের আসামি করেন। সে সময় ওই বৃদ্ধ হজে ছিলেন। এরপরও তিনি (এসআই) ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার (আকতার) বাড়ি ভেঙে দেন। বাড়ির সমস্ত মালামাল শাজাহানপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুই মাসের মাথায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।

এসআই আতিকুল ইসলাম গত ২০১৭ সালে শাজাহানপুরের মাঝিড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জোব্বার হোসেনকে দিয়ে আবারো জায়গা দখলের চেষ্টা করেন। উপায় না পেয়ে আকতার বগুড়ার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জোব্বার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৯ সালে আদালত জোব্বারের বিরুদ্ধে আদেশ দেন।

আদালতের আদেশের কাগজ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেওয়া হলেও এসআই আতিকুলের নির্দেশে জোব্বার হোসেন গত ৫ এপ্রিল জায়গাটি আবারো অবৈধ দখল শুরু করেন। ইট-সিমেন্ট দিয়ে জমিটি ঘিরে নেন। এ ব্যাপারে থানায় সহযোগিতা চাইতে গেলে জানানো হয় দীর্ঘ দুই বছরেও আদালতের আদেশের কপি তারা পায়নি। তিনি তখন বগুড়া পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে জায়গাটি রক্ষার অনুরোধ করেন। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে জায়গাটি বেদখল হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

এদিকে আদালতের ওই আদেশ থানায় না আসায় আকতার গত ১২ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া এসআই আতিকুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের সবধরনের অপরাধের বিচার চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ দেন। এছাড়া বুধবার মাঝিড়া মাছের আড়ত এলাকায় মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বগুড়ার শাজাহানপুর থানার তৎকালীন এসআই আতিকুল ইসলাম ফোনে সাংবাদিকদের জানান, তিনি বর্তমানে রংপুর রেঞ্জে পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারা ভঙ্গ করে জমি ক্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে কোনো বাধানিষেধ নেই। তিনি প্রকৃত মালিকের কাছে জায়গা কিনেছেন।

অপর অভিযুক্ত বিএনপি নেতা জোব্বার হোসেন দাবি করেন, তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে গত ২০১৭ সালে এসআই আতিকুল ইসলামের কাছে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় তার চার শতক জায়গা নিয়েছেন। বর্তমানে মহাসড়ক সম্প্রসারণে অধিগ্রহণের পর অর্ধেক জায়গা ভাড়াটে হিসেবে সংরক্ষণ করতে ইটের দেয়াল তুলেছেন। এখানে তিনি কাউকে হুমকি বা বাধা দেননি।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন