অবৈধভাবে জোরপূর্বক ভূমি দখলের লক্ষ্যে সন্ত্রাসীরা একটি সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর চালিয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। মহিলাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে বসতঘরে আগুন লাগিয়ে উল্লাস করতে থাকলেও ভয়ে আগুন নেভাতে কেউ সাহস পায়নি। নারকীয় এই ঘটনাটি ঘটেছে কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। এ ব্যাপারে সংখ্যালঘু পরিবার থানায় মামলা করলে সন্ত্রাসী চক্রটি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল ১০টায় একই গ্রামের ইলিয়াছ মিয়াসহ ৭০/৮০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ নন্দলাল নাথের বাড়িতে প্রবেশ করে মহিলাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বাড়ির মহিলারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ইলিয়াছ গং নন্দলালের বসতঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেয়ার পূর্বে সন্ত্রাসীরা বাড়ির অর্ধেক জুড়ে বেড়া দিয়ে জবরদখল করে নেয়। ঘরে আগুন দেয়ার পর নন্দলালের মেয়ে এবং পুত্রবধূর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ আগুন নেভাতে সাহস পায়নি। উপস্থিত সবাই ছিল দর্শকের ভূমিকায়। একপর্যায়ে স্থানীয় মেম্বার আজাদ মিয়া এবং ঐ এলাকায় অবস্থানরত কর্মধা ইউনিয়নের সবুর মেম্বার উপস্থিত হলেও আগুন নেভাতে সাহস পাননি। পরে এলাকার এক মেম্বার কুলাউড়া থানায় মোবাইল ফোনে খবর দিলে এসআই ফারুকের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে দুটি ঘর সম্পূর্ণরূপে পুড়ে ভস্মীভূত হয়। ঘটনার দিন নন্দলালসহ তার পরিবারের সদস্যরা ইলিয়াছ মিয়ার দায়ের করা একটি মামলার হাজিরা দিতে মৌলভীবাজার আদালতে ছিল। এ ঘটনায় জীতেন্দ্র দেবনাথ বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল সহকারী পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুলাউড়া থানা এবং এসআই ফারুক আহমদ ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্ত করেন। উক্ত ঘটনার পর কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করার পর আসামীরা নন্দলাল ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আসামীরা এলাকায় অবস্থান করে রাতে নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে বলে নির্যাতিত পরিবারটি জানায়। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামী ইলিয়াছ মিয়া সরকারী দলের ছত্রছায়ায় অবস্থান নিয়েছে। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ফলে পুলিশের ভূমিকা স্থানীয় সচেতন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, উক্ত সন্ত্রাসী ইলিয়াছ মিয়ার সঙ্গে জীতেন্দ্র দেবনাথের পরিবারের জমিসংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। এ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশসহ বিভিন্ন মহল বিপুল অঙ্কের টাকা কামিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ নেতা ও পুলিশের পরোক্ষ ইঙ্গিতে সন্ত্রাসী ইলিয়াছ মিয়া একের পর এক মিথ্যা মামলা ও হয়রানি করে এবং সর্বশেষ বসতঘর আগুনে পুড়িয়ে ঐ পরিবারটিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘু এলাকাবাসী ও উপজেলার সংখ্যালঘু নেতৃতববৃন্দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, ইলিয়াছ মিয়ার সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয় এমপি এম এম শাহীনের পরামর্শক্রমে এমপির অফিসে উপজেলা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃতববৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণ বৈঠকে বসেন। কিন্তু ইলিয়াছ মিয়ার অসহযোগিতার কারণে সমস্যার সমাধান হয়নি। এদিকে ইলিয়াছ মিয়া ও তার লোকজন নন্দলাল ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৯ মে ২০০২

মন্তব্য করুন