রাজশাহীতে এক সংখ্যালঘু আ’লীগ কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া পৃথক আরও তিনটি ঘটনায় আ’লীগ এর এক নেতাসহ ছয়জন কর্মী-সমর্থক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একই পরিবারের তিন মহিলাও রয়েছেন। অন্যদিকে, ১৯টি আদিবাসী পরিবারকে তাদের বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের জন্য হুমকিদান চলছেই।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে তানোর উপজেলার সরনজাই ইউনিয়নের রাতুল গ্রামে নরেশ চন্দ্র দাস (৪০) নামে এক সংখ্যালঘুকে হত্যা করা হয়। নরেশকে সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারে দেখা যায়। এরপর তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল তার বাড়ি থেকে কয়েকশ গজ দূরে একটি পুকুরের ধারে নরেশের লাশ পাওয়া গেছে। লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে থেকে এখানকার কয়েকশ’ আদিবাসী ও সংখ্যালঘু লোককে বিএনপি সমর্থকরা হুমকি দিয়ে আসছিল নৌকা মার্কায় ভোট না দেয়ার জন্য। নির্বাচনের রাতে মিছিল থেকে মন্দিরে হামলা ও পটকা ফাটানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজশাহী-১ আসনের পরাজিত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, বিএনপি সমর্থকরা নরেশকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তার মতে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল লক্ষ্য হলো সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করা। তিনি বলেন নরেশকে রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর, বাংধারা গ্রামের আদিবাসী ১৯টি পরিবারকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। তারা এই গ্রামে ৭০/৮০ বছর ধরে বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে তাদের বাড়ির আঙিনায় ও আশেপাশে আম ও নিম গাছ লাগিয়ে দিয়ে দখলের সূচনা করা হয়েছে বলে আদিবাসীরা অভিযোগ করেছে। আদিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। অন্যথায় তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোদগবাড়ীর দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পৃথক দলিলের মাধ্যমে ১৯টি পরিবার যেসব জমিতে বসবাস করছে, তা ১৫ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছে। তারাই এখন আদিবাসীদের উচ্ছেদের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে আদিবাসীরা জানায়।

সংবাদ, ১৩ অক্টোবর ২০০১

 

মন্তব্য করুন